প্রিন্টঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৫
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে ভোক্তার হাঁসফাঁস
মাছ, মাংস, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ডেইলি সান রিপোর্ট, ঢাকা
প্রকাশঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম ভোক্তাদের হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না ক্রেতারা। ব্যয় কাটছাঁট করেও কোনো স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরও করুণ হয়ে উঠেছে।
গত দুই মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ, ডাল, মুরগির ডিম, মাছ ও সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৬০-১৮০ টাকা, করলা ১০০-১২০, ঢেঁরস ও পটোল ৮০-১০০, বরবটি ১০০-১২০, শসা ৮০, ঝিঙা ৮০-১০০, দুন্দল ৯০-১০০, চিচিঙা ৮০, নতুন শিম ২২০-২৪০ এবং কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে সস্তা সবজি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, যার দামও কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা।
আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা। এ অবস্থায় ক্রেতারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বাজার করতে আসা মহাখালী কাঁচাবাজারের ক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় বাজারে তালমাটাল পরিস্থিতি চলছে। মাছ-মাংস কিনতে গেলে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে যেতে হয়। এখন ছোট মাছের দামও নাগালের বাইরে। সীমিত আয়ের মানুষ প্রতি মাসে ঋণ না করলে সংসার চালাতে পারছে না।
মিরপুর কাজীপাড়ায় বাজার করতে আসা ক্রেতা আক্তার হোসেনের অভিমত, আগে মাছ-মাংসের দাম বাড়লে ডিম ও সবজির ওপর নির্ভর করা যেত। কিন্তু এখন ডিম ও সবজির দামও আকাশচুম্বী। মানুষ কোথায় যাবে? সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার।
অন্যদিকে বিক্রেতারাও বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ফলে সরবরাহ কমেছে। বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতা হারুন জানান, পাইকারি বাজারেই আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। দাম বাড়ায় ক্রেতারা সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, এতে বিক্রেতারাও লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরবরাহ ঘাটতি নয়, বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও তদারকির অভাবও দায়ী। বাজার তদারকি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠন ‘ভোক্তা’র নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, ভোক্তারা এখন এতটাই সহনশীল হয়ে গেছেন যে এই অস্বাভাবিক দামকে ভাগ্যের ফের মনে করছেন। অথচ সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিয়মিত বাজারে হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। তিনি আরও বলেন, নরসিংদীতে যে বেগুন ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় এসে সেটি ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে সরবরাহ শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে নৈতিক-অনৈতিক ভ্যালু অ্যাডিশনের কারণে দাম বাড়ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, চালের মতো প্রধান খাদ্যশস্যও মৌসুমে দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, যা সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতার প্রমাণ। তাঁর মতে, বাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপ চালু না করলে ভোক্তাদের এই অসহায় অবস্থা দূর হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। পাইকারি পর্যায়ে একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙা, খাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করতে হবে। না হলে খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকবেই। [সূত্র: কালের কণ্ঠ]
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
নিত্যপণ্য থেকে আরও
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে ভোক্তার হাঁসফাঁস
মাছ, মাংস, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ডেইলি সান রিপোর্ট, ঢাকা
Published: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম ভোক্তাদের হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না ক্রেতারা। ব্যয় কাটছাঁট করেও কোনো স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরও করুণ হয়ে উঠেছে।
গত দুই মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ, ডাল, মুরগির ডিম, মাছ ও সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৬০-১৮০ টাকা, করলা ১০০-১২০, ঢেঁরস ও পটোল ৮০-১০০, বরবটি ১০০-১২০, শসা ৮০, ঝিঙা ৮০-১০০, দুন্দল ৯০-১০০, চিচিঙা ৮০, নতুন শিম ২২০-২৪০ এবং কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে সস্তা সবজি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, যার দামও কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা।
আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা। এ অবস্থায় ক্রেতারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বাজার করতে আসা মহাখালী কাঁচাবাজারের ক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় বাজারে তালমাটাল পরিস্থিতি চলছে। মাছ-মাংস কিনতে গেলে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে যেতে হয়। এখন ছোট মাছের দামও নাগালের বাইরে। সীমিত আয়ের মানুষ প্রতি মাসে ঋণ না করলে সংসার চালাতে পারছে না।
মিরপুর কাজীপাড়ায় বাজার করতে আসা ক্রেতা আক্তার হোসেনের অভিমত, আগে মাছ-মাংসের দাম বাড়লে ডিম ও সবজির ওপর নির্ভর করা যেত। কিন্তু এখন ডিম ও সবজির দামও আকাশচুম্বী। মানুষ কোথায় যাবে? সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার।
অন্যদিকে বিক্রেতারাও বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ফলে সরবরাহ কমেছে। বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতা হারুন জানান, পাইকারি বাজারেই আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। দাম বাড়ায় ক্রেতারা সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, এতে বিক্রেতারাও লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরবরাহ ঘাটতি নয়, বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও তদারকির অভাবও দায়ী। বাজার তদারকি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠন ‘ভোক্তা’র নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, ভোক্তারা এখন এতটাই সহনশীল হয়ে গেছেন যে এই অস্বাভাবিক দামকে ভাগ্যের ফের মনে করছেন। অথচ সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিয়মিত বাজারে হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। তিনি আরও বলেন, নরসিংদীতে যে বেগুন ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় এসে সেটি ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে সরবরাহ শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে নৈতিক-অনৈতিক ভ্যালু অ্যাডিশনের কারণে দাম বাড়ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, চালের মতো প্রধান খাদ্যশস্যও মৌসুমে দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, যা সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতার প্রমাণ। তাঁর মতে, বাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপ চালু না করলে ভোক্তাদের এই অসহায় অবস্থা দূর হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। পাইকারি পর্যায়ে একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙা, খাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করতে হবে। না হলে খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকবেই। [সূত্র: কালের কণ্ঠ]



