প্রিন্টঃ ১৯ অক্টোবর ২০২৫
শান্তিতেও স্বস্তি নেই নেতানিয়াহুর, সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
আলজাজিরা
প্রকাশঃ ২৩ ঘণ্টা আগে
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘ হামলায় অগণিত প্রাণহানি এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো মোটেও শেষ হয়নি। বরং অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, গাজা যুদ্ধকে তিনি নিজ রাজনৈতিক অবস্থান এবং দুর্নীতি মামলা থেকে মনোযোগ সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও, সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসের মতো সমালোচকেরা মনে করেন, এটি ছিল হোয়াইট হাউসের চাপে সাজানো একটি নাটক। প্রশ্ন উঠছে, যদি নেতানিয়াহু নতুন কোনো সংঘাত শুরু করতে না পারেন, তবে আগামী ইসরায়েলি নির্বাচনের আগে-পরে তার সামনে কী কী কঠিন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে?
১. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিঃসঙ্গতা: গত দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার জেরে ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অতীতের চেয়েও বেশি একা। নেতানিয়াহুর ‘সুপার স্পার্টা’ তৈরির স্বপ্নও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ইসরায়েলি অর্থনীতিবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, যার জেরে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ধসে গিয়েছিল। গাজার হত্যাযজ্ঞের চিত্র বিশ্ব গণমাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলে ইসরায়েলের একঘরে অবস্থান আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
২. দক্ষিণপন্থী জোট ভাঙার ঝুঁকি: চরম দক্ষিণপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনও জোটে আছেন। তবে জোট টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু আলট্রা-অর্থডক্স দলগুলোকে সন্তুষ্ট করতে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সামরিক নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আইন আনার চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি জোট ভাঙার ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন।
৩. আইসিসি ও আইসিজে’র আইনি বিপদ: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গণহত্যার মামলা শুনছেন। আইসিসি দোষী সাব্যস্ত করলে নেতানিয়াহুর সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
৪. ট্রাম্পের সমর্থন হারানোর শঙ্কা: ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ভরসা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর বেশ কয়েকবার ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিশেষ করে ২০২১ সালে বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো বা হামাসের আলোচকদের ওপর বিমান হামলার পর ট্রাম্পের ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। ট্রাম্প সাফ জানিয়েছেন, তিনি না বলা পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় আবার ঢুকবে না। ফলে ট্রাম্পের সমর্থন হারানো নেতানিয়াহুর জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
৫. ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে তদন্ত: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে তদন্তের সম্ভাবনা বাড়ছে। সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা ধরা পড়ার পর তাদের প্রধানরা পদত্যাগ করেছেন। নেতানিয়াহু নিজ সরকারের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের বিরোধিতা করলেও, ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে যে তদন্ত বিলম্বের আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আদালত সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে।
৬. দুর্নীতি মামলার রায় ও জেল-আশঙ্কা: নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের তিনটি দুর্নীতি মামলা চলমান। এসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ট্রাম্প নিজেও ইসরায়েলি পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই মামলার গুরুত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি হলেও, এই আইনি প্রক্রিয়া তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সূত্র: আলজাজিরা
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
মন্তব্য করুন
আন্তর্জাতিক থেকে আরও
শান্তিতেও স্বস্তি নেই নেতানিয়াহুর, সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
আলজাজিরা
Published: ২৩ ঘণ্টা আগে
শেয়ার করার বিকল্পগুলি

গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘ হামলায় অগণিত প্রাণহানি এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো মোটেও শেষ হয়নি। বরং অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, গাজা যুদ্ধকে তিনি নিজ রাজনৈতিক অবস্থান এবং দুর্নীতি মামলা থেকে মনোযোগ সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও, সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসের মতো সমালোচকেরা মনে করেন, এটি ছিল হোয়াইট হাউসের চাপে সাজানো একটি নাটক। প্রশ্ন উঠছে, যদি নেতানিয়াহু নতুন কোনো সংঘাত শুরু করতে না পারেন, তবে আগামী ইসরায়েলি নির্বাচনের আগে-পরে তার সামনে কী কী কঠিন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে?
১. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিঃসঙ্গতা: গত দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার জেরে ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অতীতের চেয়েও বেশি একা। নেতানিয়াহুর ‘সুপার স্পার্টা’ তৈরির স্বপ্নও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ইসরায়েলি অর্থনীতিবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, যার জেরে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ধসে গিয়েছিল। গাজার হত্যাযজ্ঞের চিত্র বিশ্ব গণমাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলে ইসরায়েলের একঘরে অবস্থান আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
২. দক্ষিণপন্থী জোট ভাঙার ঝুঁকি: চরম দক্ষিণপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনও জোটে আছেন। তবে জোট টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু আলট্রা-অর্থডক্স দলগুলোকে সন্তুষ্ট করতে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সামরিক নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আইন আনার চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি জোট ভাঙার ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন।
৩. আইসিসি ও আইসিজে’র আইনি বিপদ: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গণহত্যার মামলা শুনছেন। আইসিসি দোষী সাব্যস্ত করলে নেতানিয়াহুর সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
৪. ট্রাম্পের সমর্থন হারানোর শঙ্কা: ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ভরসা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর বেশ কয়েকবার ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিশেষ করে ২০২১ সালে বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো বা হামাসের আলোচকদের ওপর বিমান হামলার পর ট্রাম্পের ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। ট্রাম্প সাফ জানিয়েছেন, তিনি না বলা পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় আবার ঢুকবে না। ফলে ট্রাম্পের সমর্থন হারানো নেতানিয়াহুর জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
৫. ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে তদন্ত: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে তদন্তের সম্ভাবনা বাড়ছে। সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা ধরা পড়ার পর তাদের প্রধানরা পদত্যাগ করেছেন। নেতানিয়াহু নিজ সরকারের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের বিরোধিতা করলেও, ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে যে তদন্ত বিলম্বের আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আদালত সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে।
৬. দুর্নীতি মামলার রায় ও জেল-আশঙ্কা: নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের তিনটি দুর্নীতি মামলা চলমান। এসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ট্রাম্প নিজেও ইসরায়েলি পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই মামলার গুরুত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি হলেও, এই আইনি প্রক্রিয়া তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সূত্র: আলজাজিরা