প্রিন্টঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৫
সংকটে রংপুর শিল্পনগরী, ২০ বছরেও থমকে দ্বিতীয় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ
১৯৮০ সালে ২০ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী।
ডেইলি সান রিপোর্ট, ঢাকা
প্রকাশঃ ০৫ মে ২০২৫
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
রংপুর শিল্পনগরীর ১৮টি কারখানার মধ্যে তিনটি ঋণ জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে, দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য গত ২০ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হলেও জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো আটকে আছে।
এ কারণে পরিকল্পিতভাবে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ও বিসিক সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প পার্ক গড়তে গত বছরের ৩০ এপ্রিল রংপুর সদর উপজেলার রামনাথপুর ও হরিদেবপুর মৌজার ১০০ একর জমির সম্ভাব্য মূল্য ও স্কেচ ম্যাপসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কৃষিপণ্য ও ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য স্থানীয় উপযুক্ততা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও জমির অধিগ্রহণ মূল্যসহ সার্বিক বিবেচনায় রংপুর সদর উপজেলাধীন রামনাথপুর ও হরিদেবপুর মৌজার ১০০ একর জমিতে শিল্প পার্ক স্থাপনের উপযুক্ত স্থান মনে হয়েছে। শ্রেণিভিত্তিক গড় মূল্যতালিকা অনুযায়ী হরিদেবপুর মৌজার দলা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ১৫ হাজার ৩০০ টাকা হিসাবে ১৮.৯৬২৫ একর দলা শ্রেণির জমির মূল্য দুই কোটি ৯০ লাখ ১২ হাজার ৬২৫ টাকা।
ডাঙ্গা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ৩২ হাজার ১৬২ টাকা হিসাবে ৩.৩৩২৫ একর জমির মূল্য এক কোটি ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫৮৬ টাকাসহ মোট তিন কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার ২১১ টাকা প্রয়োজন।’
অন্যদিকে ‘রামনাথপুর মৌজার দলা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ছয় হাজার ৩০০ টাকা হিসাবে ৭৫.৭৩৫০ একর জমির মূল্য চার কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০ টাকা এবং ডাঙ্গা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য সাত হাজার ৯৯৯ টাকা হিসাবে ১.১৭ একর জমির মূল্য ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৩ টাকাসহ মোট চার কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টাকা। দুই মৌজায় আট কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪ টাকা প্রয়োজন। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন অনুযায়ী বাজারমূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ, আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৭.৫ শতাংশসহ সর্বমোট সম্ভাব্য মূল্য ২৮ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৮ টাকা প্রয়োজন।’
জেলা প্রশাসকের অফিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জেলা প্রশাসকের পাঠানো এই চিঠির কোনো উত্তর মেলেনি। এর আগে ১৯৮০ সালে ২০ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী। নানা সংকটের কারণে রংপুর বিসিকে জায়গা হচ্ছে না নতুন উদ্যোক্তাদের। তাই ২০০৪ সাল থেকে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়তে চিঠি চালাচালি হয়ে আসছে।
উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, রংপুরে বিসিকের অধীনে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন শিল্পনগরী হলেও নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ হবে। ছোট-বড় শিল্পের বিকাশের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু বৈষম্য দূরই হচ্ছে না।
শিল্পোদ্যোক্তা আবদুল মজিদ বলেন, প্লটের অভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারছেন না। অথচ নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, বিসিকের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে। তাই দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
রংপুর বিসিক উপমহাব্যবস্থাপক এহেছানুল হক বলেন, ‘দ্বিতীয় শিল্পনগরীর প্লটের জন্য গত বছরের ৩০ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এটি ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আশ্বস্ত করেছে মন্ত্রণালয়।’
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
শিল্প থেকে আরও
সংকটে রংপুর শিল্পনগরী, ২০ বছরেও থমকে দ্বিতীয় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ
১৯৮০ সালে ২০ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী।
ডেইলি সান রিপোর্ট, ঢাকা
Published: ০৫ মে ২০২৫
শেয়ার করার বিকল্পগুলি
ছবি: সংগৃহীত
রংপুর শিল্পনগরীর ১৮টি কারখানার মধ্যে তিনটি ঋণ জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে, দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য গত ২০ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হলেও জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো আটকে আছে।
এ কারণে পরিকল্পিতভাবে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ও বিসিক সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প পার্ক গড়তে গত বছরের ৩০ এপ্রিল রংপুর সদর উপজেলার রামনাথপুর ও হরিদেবপুর মৌজার ১০০ একর জমির সম্ভাব্য মূল্য ও স্কেচ ম্যাপসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কৃষিপণ্য ও ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য স্থানীয় উপযুক্ততা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও জমির অধিগ্রহণ মূল্যসহ সার্বিক বিবেচনায় রংপুর সদর উপজেলাধীন রামনাথপুর ও হরিদেবপুর মৌজার ১০০ একর জমিতে শিল্প পার্ক স্থাপনের উপযুক্ত স্থান মনে হয়েছে। শ্রেণিভিত্তিক গড় মূল্যতালিকা অনুযায়ী হরিদেবপুর মৌজার দলা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ১৫ হাজার ৩০০ টাকা হিসাবে ১৮.৯৬২৫ একর দলা শ্রেণির জমির মূল্য দুই কোটি ৯০ লাখ ১২ হাজার ৬২৫ টাকা।
ডাঙ্গা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ৩২ হাজার ১৬২ টাকা হিসাবে ৩.৩৩২৫ একর জমির মূল্য এক কোটি ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫৮৬ টাকাসহ মোট তিন কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার ২১১ টাকা প্রয়োজন।’
অন্যদিকে ‘রামনাথপুর মৌজার দলা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য ছয় হাজার ৩০০ টাকা হিসাবে ৭৫.৭৩৫০ একর জমির মূল্য চার কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০ টাকা এবং ডাঙ্গা শ্রেণির প্রতি শতক জমির মূল্য সাত হাজার ৯৯৯ টাকা হিসাবে ১.১৭ একর জমির মূল্য ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৩ টাকাসহ মোট চার কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টাকা। দুই মৌজায় আট কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪ টাকা প্রয়োজন। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন অনুযায়ী বাজারমূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ, আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৭.৫ শতাংশসহ সর্বমোট সম্ভাব্য মূল্য ২৮ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৮ টাকা প্রয়োজন।’
জেলা প্রশাসকের অফিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জেলা প্রশাসকের পাঠানো এই চিঠির কোনো উত্তর মেলেনি। এর আগে ১৯৮০ সালে ২০ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী। নানা সংকটের কারণে রংপুর বিসিকে জায়গা হচ্ছে না নতুন উদ্যোক্তাদের। তাই ২০০৪ সাল থেকে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়তে চিঠি চালাচালি হয়ে আসছে।
উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, রংপুরে বিসিকের অধীনে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন শিল্পনগরী হলেও নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ হবে। ছোট-বড় শিল্পের বিকাশের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু বৈষম্য দূরই হচ্ছে না।
শিল্পোদ্যোক্তা আবদুল মজিদ বলেন, প্লটের অভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারছেন না। অথচ নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, বিসিকের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে। তাই দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
রংপুর বিসিক উপমহাব্যবস্থাপক এহেছানুল হক বলেন, ‘দ্বিতীয় শিল্পনগরীর প্লটের জন্য গত বছরের ৩০ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এটি ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আশ্বস্ত করেছে মন্ত্রণালয়।’



