Logo
×

Follow Us

শিল্প

এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি ব্যয় তিন গুণ বাড়তে পারে

এলএনজি আমদানিতে এই বিপুল ব্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে।

ডেইলি সান রিপোর্ট, ঢাকা

Published: ১৩ মে ২০২৫

এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি ব্যয় তিন গুণ বাড়তে পারে

ছবি: সংগৃহীত

শুনুন | ৮:৪৮ মিনিট

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় প্রায় তিন গুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এলএনজির বর্তমান আমদানি ব্যয়ে ১৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে এই খাতে বরাদ্দ আছে মাত্র ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর ফলে, সরকারকে অতিরিক্ত ১১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ ব্যয় করতে হতে পারে।

জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এলএনজি ভর্তুকিতে সরকারের ব্যয় ছিল ছয় হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এর আগের দুই অর্থবছরেও এই ব্যয়ের পরিমাণ কাছাকাছি ছিল। তবে, চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়ার কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ১৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এলএনজি আমদানিতে এই বিপুল ব্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে। দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি), বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে গড়ে দুই হাজার ৭০৭ এমএমসিএফডি। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

চলতি বছর ৯৮টি এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এই গ্যাস বিক্রি করে সরকারের আয় হবে প্রায় ৩৮ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, যার ফলে ঘাটতি দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এলএনজি খাতে বরাদ্দ ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ফলে বছর শেষে মোট অতিরিক্ত ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ১৭৭ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে সরকার প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে প্রায় ৬০ টাকা ব্যয় করলেও, শিল্প খাতে ৩০-৩১.৫০ টাকা, আবাসিকে ১৮ টাকা ও সিএনজি স্টেশনে ৪৩ টাকায় বিক্রি করায় গড়ে প্রতি ঘনমিটারে সরকারের লোকসান হচ্ছে সাত টাকা আট পয়সা। এই লোকসান পূরণের জন্যই প্রতি বছর ভর্তুকি প্রদান করা হয়।

উৎপাদন হ্রাসের কারণে আমদানির ওপর চাপ বেড়েছে। ২০২৫ সালের মার্চে দেশের গড় দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ছিল এক হাজার ৮৬২ এমএমসিএফডি, যা ২০২৩ ও ২০২৪ সালের মার্চে ছিল যথাক্রমে দুই হাজার ১৭৬ ও দুই হাজার ৪০ এমএমসিএফডি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের পরিকল্পনা নিয়েছে, যা সফল হলে জাতীয় গ্রিডে ৬৪৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত হতে পারে। ২০২৮ সালের মধ্যে আরো ১০০টি কূপ খনন করে ৯৮৫ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পাশাপাশি, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার কারিগরি ক্ষতি ৫০ শতাংশ কমানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আমদানি করা এলএনজির গড় মূল্য বর্তমানে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১০.৫০ ডলার, যা স্পট মার্কেট থেকে কিনলে প্রায় ১৪ ডলারে পৌঁছে যাচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এই ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম সহনীয় রাখতে সরকার এলএনজি আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করেছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শিল্প, পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল রাখতে সরকার এলএনজি সরবরাহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এ কারণে আগামী বছরগুলোতেও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়তে পারে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন ক্রমশ কমছে, তাই এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে এবং এর ফলে ১১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন

আরও পড়ুন