নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিএস২১১ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের নামাজে জানাজার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আর্মি স্টেডিয়াম। বিকাল ৪টায় সেখানে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সোমবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে লাশবাহী কফিন রাখার জন্য আলাদা জায়গা সাজানো হয়েছে। তাতে তাজা ফুল রাখা হয়েছে। জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য স্টেডিয়ামের ভেতরে সাদা চুন দিয়ে লাইন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে জানাজার জন্য ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন, এজন্য স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ডগ স্কোয়াড দিয়ে গোটা স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে।
নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ আজ সোমবার (১৯ মার্চ) দেশে আনা হচ্ছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানানো হয়, নিহতদের মরদেহ নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ বিকাল ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি পার্কিং-১ এ অবতরণ করবে। সেখান থেকে লাশগুলো সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর বিকেল ৪ টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।
স্বজনরা কে কোথায় মরদেহ নিতে চান জানালে সেখানে পৌঁছে দেবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। মরদেহ পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে বিমান পরিবহন সংস্থাটি।
নেপালে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার বিলকিস বানু, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, কেবিন ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ, কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলা, ফয়সাল আহমেদ, সানজিদা হক বিপাশা, ও মো. নুরুজ্জামান।
নিহত ২৬ জনের মধ্যে এখনও তিনজনের লাশ সনাক্ত করা যায়নি। তারা হলেন- আলিফউজ্জামান, মো. নজরুল ইসলাম ও পিয়াস রয়। ডিএনএ পরীক্ষার পর তাদের মরদেহ শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে নেপাল কতৃপক্ষ।
এছাড়া কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া আহত ১০ বাংলাদেশি যাত্রীর মধ্যে ৯ জন নেপাল ছেড়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল (রবিবার) বিকেলে আহত শাহীন বেপারীকে দেশে ফিরেয়ে আনা হয়।
এর আগে শনিবার (১৭ মার্চ) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০৭২ ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হয় রুবাইয়াত রশীদ নামের এক যাত্রীকে। বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে শেহরিন আহমেদকে ঢাকায় এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এছাড়া শুক্রবার (১৬ মার্চ) বিকেলে মেহেদী, স্বর্ণা ও এ্যানিকেও কাঠমান্ডুর কেএমসি থেকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া বুধবার (১৪ মার্চ) রাতে রেজওয়ানুলকে কাঠমান্ডুর ওএম হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে ইয়াকুব আলী নামে আহত এক যাত্রীকে কাঠমান্ডু থেকে দিল্লীতে পাঠানো হয় এবং শনিবার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইমরানা কবীর হাসিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিংঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
কবির হোসেন নামের আহত এক যাত্রী এখনও কাঠমান্ডুতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (১২ মার্চ) স্থানীয় সময় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের এস২-এজিইউ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট, ক্রু ও যাত্রীসহ ৫২ জন নিহত হন। ইউএস বাংলার ওই বিমানটিতে মোট ৬৭জন যাত্রী চার ক্রুসহ ৭১জন আরোহী ছিলেন। আরোহীর মধ্যে ৩৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৬ জন নিহত হন। এ ছাড়া ১০ বাংলাদেশিসহ ১৯ জন আহত হন। পরে হতাহতের উদ্ধার করে স্থানীয় কেএমসি হাসপাতাল, নরভিক হাসপাতাল ও ওম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিমানটিতে ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দু’জন শিশু ছিল।